গ্রীন টি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

গ্রীন টি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ যা আপনাকে জানতেই হবে

চা খান না এমন মানুষ বাংলাদেশে খুব কমই পাওয়া যাবে। আর এই চায়ের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে দুধ চা। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষজন আবার অন্যান্য চায়ের পরিবর্তে গ্রীন টি টাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এই ভেষজ, ওষুধ গুণাগুণ সম্পন্ন চায়ে রয়েছে অনেক উপকার। কিন্তু খাবারের নিয়ম না জানা বা অন্যান্য যেকোন কারণে গ্রীন টি আমাদের স্বাস্থ্যহানী ঘটাতে পারে।

আমরা কি কখনো জানার চেষ্টা করেছি গ্রীন টি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি? কেনইবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়? এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যাহোক, গ্রীন টি এর প্রধান প্রধান সাইড ইফেক্ট গুলোর মধ্যে রয়েছে রোষপ্রবণতা/বিরক্তি, অনিদ্রা, অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, ইত্যাদি।

আমরা এই আর্টিকেলে আলোচনা করার চেষ্টা করবো এই ঔষধি চায়ের কিছু উল্লেখযোগ্য মন্দ প্রভাব এবং ঠিক কি কি কারণে এই মন্দ প্রভাব গুলো দেখা দেয়। তাই আরে দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

গ্রীন টি এর উল্লেখযোগ্য ১০টি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ

গ্রীন টি তে রয়েছে পর্যাপ্ত ওষধি গুণ যা নানাবিধ অসুখ সারাতে অনবদ্য। কিন্তু অপরিমিত/মাত্রাতিরিক্ত সেবন, অসময়ে পান মোটেই মঙ্গলকর নয়। এই অংশে আমরা আলোচনা করবো এর কিছু সাইড ইফেক্ট নিয়ে যা আপনাকে সতর্ক করবে।

১। পেটের সমস্যাঃ

পেটের সমস্যা

গ্রীন টি এর অপকারিতার মধ্যে যেটা প্রথমে নিয়ে আসতে চাই সেটা হচ্ছে পেটের সমস্যা। এই চায়ে থাকে ট্যানিন নামক রাসায়নিক উপাদান যা পাকস্থলিতে এসিড তৈরি করে। এই অতিরিক্ত এসিড হজমের সমস্যার জন্যে দায়ী হতে পারে এবং ফলস্বরূপ দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ইত্যাদি। 

২। মাথাব্যথাঃ

মাথাব্যথা

দ্বিতীয় যে সমস্যার কথা উল্লেখ করবো সেটা হচ্ছে মাথাব্যথা। এই চা মাইগ্রেনের সমস্যার জন্যে বেশ কার্যকর বিবেচিত হয়। কিন্তু এই চা কিছু ব্যক্তির মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। কারণ এতে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্যাফেইন যা মাথাব্যথা হওয়ার কারণ হতে পারে।

ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীলতাও এর জনহে দায়ী হতে পারে। এছাড়াও, এর ফলে মাথা ঘোরা সহ কোন কোন ক্ষেত্রে মাথা ঝিম ঝিম ও অস্বস্থিও লাগতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণ খাওয়াই হবে সেরা সিদ্ধান্ত।

৩। অনিদ্রার সমস্যাঃ

অনিদ্রার সমস্যা

বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পন্ন এই চা কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার ঘুমের সমস্যার জন্যে দায়ী হতে পারে। যদি আপনার প্রতিনিয়ত ঘুমানোর সমস্যা ভোগ করেন এবং এই চা সেবনে আসক্ত হোন তাহলে দেখে নিন আপনি দিনে কি পরিমাণ সেবন করেন। এই ভেষজ চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাফেইন এবং ক্যাটাচিন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে যদি ক্যাফেইনের প্রতি কারো সংবেদনশীলতা থাকে।

এছাড়াও তে রয়েছে এল-থিয়ানিনের মত পদার্থ যা মনোযোগ শক্তি ও সতর্কতা বাড়ায়, যা আপনাকে সজাগ রাখতে সাহায্য করে। তাই যাদের ক্যাফেইনের প্রতি সংবেদনশীলতা রয়েছে তাদের ন্যূনতম ঘুমানক্র ৫ ঘন্টা আগে এই চা সেবন করা উচিত।

৪। বিরক্তিভাবঃ

রোচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের মতে, অতি মাত্রায় গ্রীন টি সেবন বিরক্তি ভাব নিয়ে আসতে পারে। এটি আরো আশংকাজনক হবে যখন আপনি ক্যাফেইনের প্রতি অতিমাত্রায় সংবেদনশীল থাকেন। আবার, দৈনিক ৮ কাপের বেশি সেবন করলেও আপনার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যতটুকু পারা যায় কম মাত্রায় সেবন করাই শ্রেয়।

৫। অস্বাভাবিক/অনিয়মিত হৃদস্পন্দনঃ

কিছু কিছু গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে যে, গ্রীন টি অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের জন্যেও দায়ী। এছাড়াও, পরিমিত মাত্রায় সবুজ চা সেবন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করলেও কিছু কিছু ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে।

এতে থাকা ক্যাফেইনের প্রভাবে রক্তের চাপ বেড়ে যায়। তাই যদি আপনি হৃদরোগে ভুগেন তাহলে অবশ্যই একজন বিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।

৬। বমি বমি ভাব বা বমি হওয়াঃ 

সবকিছুরই একটি নির্দিষ্ট মাত্রা থাকে এর কম বা বেশি হলে হিতে বিপরীত হয়। যদি আপনি প্রয়োজনের থেকে বেশি সবুজ চা পান করেন তাহলে তা আপনার বমি বমি ভাব বা বমি হওয়ার কারণ হতে পারে। এই চায়ে থাকে ট্যানিন। অতিরিক্ত এই চা সেবনে ট্যানিনের মাত্রা বেড়ে গেলে তা অন্ত্রে থাকা প্রোটিনের সাথে জমাট বাধে। 

বলা বাহুল্য এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে। যদি আপনি সম্প্রতি সুস্বাস্থ্যের জন্যে এই ভেষজ উপাদানসমৃদ্ধ চা খাওয়া শুরু করেন তাহলে ৪ কাপের বেশি খাওয়া উচিৎ হবে না। ১ বা ২ কাপ হলে আরো ভালো।

৭। হাড় দুর্বল করে

হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়ামের পরিমান কমে গেলে হাড় হয়ে দুর্বল। যদিও গ্রীন টি এর উপাদানের মধ্যে ক্যালসিয়ামও একটি, দিনে অধিক সেবনের ফলে তা শরীর থেকে ক্যালসিয়াম নিষ্কাশন করে দেয় এবং হাড়কে দুর্বল করে দেয়।

তাই কতটুকু সবুজ চা দৈনিক সেবন করবেন তা অবশ্যই স্বীকৃত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খাওয়া উচিৎ।

৮। রক্তক্ষরণজনিত সমস্যাঃ

এই চা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণজনিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে যদিও খুবই বিরল। সবুজ চায়ে থাকা কিছু পদার্থ ফাইব্রিনোজেনের স্তর হ্রাস করে। এছাড়াও, ইহা ফ্যাটি এসিডের জারণ ক্রিয়া রোধ করে রক্তকে পাতলা করে ফেলে।

তাই এসব ক্ষেত্রে বিশেষ করে যদি আপনার রক্ত জমাট বাধার সমস্যা থাকে এই চা পরিহার করাই উত্তম।

৯। লিভারের রোগঃ

বিষেশজ্ঞরা বলেছেন, সবুজ চায়ে থাকা উচ্চ ক্যাফেইন জমাট বাধার ফলে লিভারের উপর অত্যধিক চাপ সৃষ্টি করে। ফলে লিভারের ক্ষতি হয়। ফার্মাকোপিয়ার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঔষধ তথ্য সংকলক, এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল যে খালি পেটে গ্রীন টি বিষের মত কাজ করে।

আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে এটি যকৃতের তেমন কোন ক্ষতি করে না। তাই যদি আপনার লিভারে কোন সমস্যা থাকে তাহলে সবুজ চা খাওয়ার পূর্বে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন।

১০। গর্ভাবস্থায় ঝুকিঃ

গর্ভাবস্থা খুব ঝুকিপূর্ণ একটা সময়। এ সময় সতর্কতা অবলম্বন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় গ্রীন টি খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে ও গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যের উন্নতি করে। কিন্তু অতিরিক্ত (২ কাপের বেশি) পান করলে এর মধ্যে থাকা ট্যানিন, ক্যাটাচিন, ও ক্যাফেইন গর্ভাবস্থায় ঝুকি বাড়াতে পারে।

এছাড়াও, শিশুকে দুগ্ধ পান করানোর ফলে শিশুর দেহে ক্যাফেইন পৌছায়, যা পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

গ্রীন টি এর অপকারিতা/পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে যা করণীয়ঃ

নিম্নোক্ত কিছু নিয়ম মেনে চললে আশা করা যায় গ্রীন টি থেকে আপনি সর্বোচ্চ সুফল পাবেন। এতদসত্বেও একজন ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

  • প্রথমেই যে বিষয়টা খেয়াল রাখবেন তা হচ্ছে যে পানি দিয়ে গ্রীন টি তৈতৈরি করছেন তা সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ কিনা। এরপর আসে সঠিক তাপমাত্রায় ফুটাচ্ছেন কিনা। সাধারণত সবুজ চা ফুটন্ত তাপমাত্রার নিচে ফূটালে ভালো। এটা হতে পারে ৬০ থেকে ৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের এর মধ্যে।
  • আমরা অনেকেই গ্রীজ টি সেবন করি কিন্তু সেটা কতটুকু ভালো মানের তা যাচাই করি না। এতে আমাদের ভালোর চেয়ে খারাপ হয়। তাই উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্নটিই হোক আপনার পছন্দ।
  • সবসময় চেষ্টা করবেন নিম্নমানের ক্যাফেইন বিদ্যমান এমন চা পছিন্দ করা। আপনি অনলাইনে খুজলেও এ ধরণের অপশন সহজেই খুজে পাবেন।
  • এবার আসি কতক্ষন ধরে গুলাবেন? ১ মিনিটের কম বা তার চেয়ে একটু বেশি সময় ধরে ফুটন্ত পানির মধ্যে গ্রীন টি ব্যাগ নাড়ালেই যথেষ্ট। এতে করে ট্যানিন এবং ক্যাফেইন কম মাত্রাত নির্গত হবে।
  • অতিরিক্ত সেবন থেকে বিরত থাকুন। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫-৮ কাপ খাওয়া যেতে পারে। ৫ কাপ বা তার কম রাখলে আরো ভালো।

উপসংহার

গ্রীন টি একটি সর্বাধিক/সর্বজনস্বীকৃত ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন পানীয় যাতে আছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা শরীর ও মস্তিষ্ককে রাখে চাঙ্গা। 

কিন্তু অত্যধিক পরিমানে সেবন বা নিয়মমাপিক সেবন না করলে তা বয়ে আনতে পারে বিপদ। তাই এই আর্টিকেলে আমি তুলে ধরেছি গ্রীন টি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং কিভাবে এই অপকার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। মেনে চলুন, সুস্থ্য থাকুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *