আসল গ্রীন টি চেনার উপায়ঃ

আসল গ্রীন টি চেনার উপায়ঃ যা না জানলে ঠকার সম্ভাবনাই বেশি

গ্রীন টি একটি ব্যাপক সমাদৃত প্রাকৃতিক চা যা ব্যপকহারে মানুষ সেবন করে তার বিভিন্ন ঔষধি গুণাগুণের জন্যে। এতে রয়েছে প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট, ক্যাফেইন, এমাইনো এসিড (এল-থিয়ানিন), হাড় গঠনকারী উপাদান ক্যালসিয়াম সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে বাজারে এখন ভুয়া/নকল গ্রীন টি এর সয়লাভ যার কোন উল্লেখযোগ্য উপকারীতা নেই।

তাহলে আসল গ্রীন টি চেনার উপায় কি? এটি চিনার অনেক উপায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বাদ, ঘ্রান, রঙ, গোটা পাতা সমৃদ্ধ, দ্রুত ও সহজে প্রস্তুতযোগ্য, ইত্যাদি। এছাড়াও, একে চেনার আরো বহু উপায় আছে যা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে।

এই আর্টিকেলে আমরা জানাতে চেষ্টা করবো কিভাবে ভালো মানের গ্রীন টি পছন্দ করা যায় যা থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল নিশ্চিত হবে।

আসল গ্রীন টি চেনার ১০ উপায়ঃ

এ পর্যায়ে আমরা দেখবো কি দেখলে বুঝা যাবে আপনি যেটা কিনবেন সেটা খাটি নাকি নকল। আসুন কয়েকটা সহজ চেনার উপায় দেখে নেয়া যাক।

১। সজীবতাঃ 

পৃথিবীতে বিদ্যমান চায়ের মধ্যে গ্রীন টি এর শেলফ লাইফ তুলনামুলক কম। যদি আপনি টি ব্যাগ না কিনে পুরো গোটা পাতা কিনেন তাহলে সজীবতাকে গুরুত্ব দিন। এক্ষেত্রে আপনাকে যে জিনিসটা লক্ষ্য করতে হবে তা হল হারভেস্ট ডেট। যদি দেখেন চায়ের পাতা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে বা দেখতে খারাপ দেখা যায় তাহলে বুঝবেন পাতার সজীবতা হারিয়ে গেছে।

২। বর্ণঃ

সতেজ গ্রীন চা এর বর্ণ আপনাকে মুগ্ধ করবে। কেননা এটি হবে হালকা থেকে উজ্জ্বল সবুজ। এই চায়ের পাতায় সাধারণত ফার্মান্টেশন প্রক্রিয়া চালানো হয় না বিধায় এগুলো সবুজ রঙ এ থাকে। কিন্তু যদি দেখেন এই পাতা সবুজ থেকে বাদামী বর্ণ ধারণ করবে।

এতে বুঝা যাবে এটির গুণগত মান অক্ষুন্ন থাকে না। আবার, এই চায়ের বর্ণ থেকে বুঝা যায় ইহা আসলে কতটুকু প্রাকৃতিক। তাই সবসময় টাটকা সবুজ চায়ের পাতাবিশিষ্ট সবুজ চা কিনার চেষ্টা করবেন। এখন আমরা বিভিন্ন বর্ণের ব্যপারে আলোচনা করবোঃ

  • যদি দেখেন চায়ের পাতাগুলো গাঢ় সবুজ তাহলে বুঝবেন এগুলো খুবই ভালো সবজির মত স্বাদের হবে।
  • যদি চায়ের পাতা উজ্জ্বল সবুজ হয় তাহলে এদের ভেষজ স্বাদ এবং গুণ তুলনামূলক কম থাকে গাঢ় সবুজ হয়ে থাকে।
  • যদি দেখেন পাতা গুলো ধূসর সবুজ তাহলে বুঝবেন এই চা সাধারণত তেতো এবং কষায় হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
  • যদি দেখেন পাতা গুলো উজ্জ্বল সবুজ-হলুদ হয় তাহলে এগুলো একটু মিষ্টি স্বাদযুক্ত হতে পারে।

৩। স্বাদ ও ঘ্রাণঃ

যথাযথ গুণসম্পন্ন গ্রীন টি স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়। সাধারণত এ চায়ের স্বাদ হালকা এবং খুবই দারুণ। এটি তাজা শাক বা সবজির মত স্বাদ এবং অনেকটা ঘাসের গন্ধ রয়েছে। এটি মিষ্টি, তেতো, এবং কষাটে হতে পারে। এটা নির্ভর করে কি ধরণের চা আপনি পছন্দ করেন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের গ্রীন টি বাজারে পাওয়া যায়।

দয়া করে খারাপ গন্ধ বা তিক্ত স্বাদের লো প্রোফাইল চা এড়িইয়ে চলুন। একটি কথা খেয়াল রাখবেন ভালোমানের প্যাকেটজাত চা পাতা বা গোটা পাতা দিনের পর দিন থাকলে নষ্ট হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নকল চা  তৈ্রির প্রথমে যেমন মাসের পর মাসের ঠিক তেমনই থাকবে।

৪। পাতার আকারঃ

অনেকেই আসল গ্রীন চায়ের পাতার আকার না জেনেই বাজার থেকে কিনে নিয়ে আসে যা একদমই অনুচিত। এর কারণে নকল গ্রীন টি আনার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই আপনাকে জানতে হবে কেমন আকার হবে অরিজিনাল গ্রিন টি ইন বাংলাদেশ।

 পাতার আকারঃ

এক্ষেত্রে আপনি যদি টি ব্যাগ কিনে নিয়ে আসেন তাহলে জানবেন না পাতার আকার কেমন। তাই আপনাকে অবশ্যই খাটি গ্রিন টি খেতে হলে অবশ্যই শুকনো পাতা হিসেবে যেগুলো পাওয়া যায় সেগুলো ক্রয় করতে হবে। আর এক্ষেত্রে পাতার আকার বড় হয়ে থাকে। এছাড়াও গ্রীন টি আসে গাছের কচি পাতা থেকে। 

৫। সার্টিফাইড গ্রীন টিঃ

গ্রীন টি আসল নাকি নকল তা বুঝার একটি ভালো উপায় হচ্ছে সেটা ভালো প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফাইড কিনা। কোন প্রতিষ্ঠান যেমন আইএসও, বিএসটিআই, ইত্যাদি দ্বারা স্বীকৃত কিনা। যদি দেখেন যে এরকম কোন প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফাইড না, তাহলে সেটা এড়িয়ে চলুন।

৬। প্রক্রিয়াজাতকরণ/প্রস্তুতকরণঃ

সাধারণত যেগুলো নকল গ্রীন টি সেগুলো বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ এবং কীটনাশক দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। তাই নিঃসন্দেহে এগুলোতে বিভিন্ন ধুলাবালি ও ক্ষতিকর উপাদানের পরিমাণ একটু বেশি থাকে এবং এগুলোর ঔষধি গুণাগুণ কমে যায়। আবার দীর্ঘদিন টি ব্যাগে থাকার কারণে এবং অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় চায়ের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।

৭। মেয়াদঃ

খাটি গ্রীন টি চেনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ন দিক হচ্ছে মেয়াদ দেখে কিনা। সাধারণত ভালো গ্রীন টি এর মেয়াদ ১২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত হতে পারে। ১৮ মাসের বেশি হয়ে গেলে সে চা আর না খাওয়াই ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো হয় ৬-১২ মাসের মধ্যে উৎপাদন হয়েছে এমন চা নির্বাচন করা।

আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে রিসেলাররা সাধারণত মেয়াদের তারিখটা বসায় প্যাকেটজাত করার সময়। এর পূর্বে অনেক দিন যাবত এটা একজনের হাত থেকে অপরজনের হাতে আসে। তাই মেয়াদ যাই থাকুক চেষ্টা করবেন ২-৩ মাস কমিইয়ে মেয়াদ হিসেব করতে।

৮। মূল্যঃ

আসল গ্রীন টির তুলনামূলক দাম একটু বেশি হলেও এর পুষ্টি গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। অর্গানিক গ্রীন টি প্রাইস ইন বাংলাদেশ এর প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ভালোমানের চা এর দাম সাধারণত  ১৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০০ টাকার বেশি হয়ে থাকে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে এই চা বানাতেও একটু সময় লাগে। তাই ভালোমানের চা চিনতে চাইলে দেখেন যে আপনার চা বানাতে কেমন সময় লাগে।

৯। ইজিসিজি সমৃদ্ধঃ

অনেক সবুজ চায়ের সমাহারে আপনি দ্বিধাদ্বন্ধে ভুগতে পারেন। তাই দেখে নিন যে আপনার ক্রয়কৃত চা টি ইইসিজি (এপিগ্যালোক্যাটাচিন গ্যালেট) সমৃদ্ধ কিনা। যে সবুজ চায়ে এই উপাদান নেই সেগুলো যথেষ্ট এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং পলিফেনল পাওয়া যায় না।

১০। পাতার মসৃণতাঃ

পাতার মসৃণতা দেখে চা কিনলেও ঠকার সম্ভাবনা কম থাকে। উন্নতমানের চা পাতা গুলো খুবই মসৃণ থাকে। এগুলো সাধারণত ভাঙা থাকে না এবং খুবই সতেজ একতা ভাব থাকে। আর যদি পাওডার হিসেবে কিনেন তাহলে দেখবেন যে এগুলো যথেষ্ট মিহি কিনা অনেকটা ট্যালকম পাওডারের মত। 

১১। উৎপাদনের সময়ঃ

সাধারণত গ্রীণ টি এর রোপণের বা চাষের সময় ধরা হয় ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল এর দিকে। প্যাকেটের উপরে যে লেবেল দেয়া আছে সেটা লক্ষ্য করুন। 

উপসংহারঃ

বাজারে অসংখ্য ব্র্যান্ডের এবং বিভিন্ন ধরণের গ্রীন টি এ সয়লাভ। আবার এর মধ্যে নল, ভেজালযুক্ত অপশনই বেশি। তাই এত অপশন থেকে সঠিক, খাটি এবং আসল গ্রীন টি খুজে বের করা খুবই কঠিন। আবার অনেকসময় কৃত্রিমভাবে তৈ্রিকৃ্ত চাও দেখতে একদম প্রাকৃ্তিক চায়ের মত লাগে।

তাই আসল গ্রিন টি চেনার উপায় জানা খুবই জরুরি। উপরে আমার দেওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ হিন্টসগুলো মাথায় রাখলে আশা করি পরবর্তীতে গ্রীন টি কেনার সময় ঠকবেন না এবং সঠিক পুষ্টিগুণ পাবেন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *