গ্রিন টি এর উপকারিতাঃ প্রাচীন পানিয়ের আশ্চর্য গুণ

আমরা সবাই বিভিন্ন চায়ের সাথে পরিচিত সেটা হতে পারে রঙ চা, দুধ চা অথবা গ্রীন টি। আমাদের বেশিরভাগ মানুষই জিহ্বার স্বাদের জন্যে দুধ চা কেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি যাতে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্যে অনেক ক্ষতিকারক উপাদান। রঙ চায়ের যদিও কিছু উপকারীতে রয়েছে কিন্তু গ্রীন টি এর উপকারীতা অতুলনীয়।

গ্রীন টি তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এবং মিনারেলস। এছাড়াও, এতে রয়েছে ক্যফেইন এবং এন্টি-অক্সিডেন্ট যার রয়েছে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারীতা। এতে থাকা এল-থায়ানিন অর্থাৎ গামা-গ্লূটামিথেলামাইড নামক এমাইনো এসিড যা বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগ কাটিইয়ে উঠতে আপনাকে সাহায্য করবে।

এমনিভাবে, গ্রীন টি এর বহু উপকারীতা রয়েছে যা আপনাকে বহু রোগ থেকে সুরক্ষা দিবে। আমরা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাকে গ্রীন টি এর উপকারীতে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করবো। 

গ্রীন টি এর স্বীকৃত ১৫ টি উপকারীতাঃ

এই অংশে আমি আপনাকে একটি স্পষ্ট ধারণা দিতে চাই গ্রীন টি কেন অন্য সকল চায়ের থেকে বেশি ফল্প্রসূ বা গ্রীন টি খাওয়ার উপকারীতাই বা কি। আর কেনইবা একজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ হিসেবে আপনাকে গ্রীন টি প্রতিদিন নিয়ম করে পান করতে হবে। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব উপকারীতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।

১। স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করেঃ

গ্রীন টি সেবনে আপনার স্মৃৃতিশক্তি হবে আরো প্রখর, আরো সমৃদ্ধ। কিভাবে? গ্রীন টি তে রয়েছে ক্যাফেইন, যা কিনা নিজেই একপ্রকার স্নায়ু উদ্দীপক। এছাড়াও, এতে থাকা এল-থিয়ানিন যা একটি এমাইনো এসিড স্মৃতিশক্তি উন্নতি করে। এটি গ্রহনের ফলে একজনের নিম্নোক্ত দক্ষতা বৃ্দ্ধি পায়ঃ

  • উপলব্ধি করার ক্ষমতা;
  • পরিকল্পনার সক্ষমতা;
  • সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা;
  • যুক্তি খন্ডনের সক্ষমতা;
  • মনোযোগি হওয়ার দক্ষতা, ইত্যাদি। 

২। ওজন নিয়ন্ত্রনে কার্যকরীঃ

ওজন নিয়ন্ত্রনে কার্যকরী GREEN TEA

আমরা সবাই মোটামুটি বলা চলে একটু তৈলাক্ত খাবার বা ফাস্ট ফুড খেতে পছন্দ করি। কিন্তু এর ফলে আমাদের স্থুলতা বেড়ে যায় যা একটি অনেক বড় সমস্যা। এর থেকে পরিত্রান পেতে আমরা অনেক পদক্ষেপ গ্রহন করি। আশার কথা হচ্ছে, গ্রীন টি এক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী এবং সহজলভ্য। গ্রীন টি-তে রয়েছে ক্যাটাচিন নামক এন্টিওক্সিডেন্ট যা মেদ/স্থুলতা কমাতে সাহায্য করে।

৩। প্রদাহজনিত ত্বকের সমস্যাঃ

গ্রীন টি এর রয়েছে প্রদাহ-রোধী ধর্ম। ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীন টি এর এক্সট্রাক্ট হতে যে ত্বকের প্রসাধনি প্রস্তুত করা হয়, সেগুলো প্রদাহের জায়গায় লাগালে আরাম পাওয়া যায় এবং ত্বকের প্রদাহে অনেক আরাম পাওয়া যায়।

৪। রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে কার্যকরীঃ

রক্তে কোলেস্টেরল নেই এমন মানুষ পাওয়া এখন দুষ্কর। আর এর প্রধান কারণ হচ্ছে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং রিচ ফুড খাওয়া। স্থুলতা বেড়ে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। এক্ষেত্রে, সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রাকৃ্তিক টোটকা হতে পারে এই ভেষজ চা। এটি সবচেয়ে কার্যকরী হবে যাদের ওজন মধ্যমমানের, অতিরিক্ত ওজন, এবং স্থুল। 

৫। মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ

গ্রীন টি হচ্ছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট যেমন ফ্ল্যাভেনয়েডস, পলিফেনল, এবং ক্যাটাচিন সমৃদ্ধ যা স্কিনের সমস্যা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, এই ভেষজ চায়ের রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ধর্ম ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

৬। মানসিক অবসাদ দূর করতেঃ

আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, এই ভেষজ চা তে আছে বিশেষ ধরণের এমাইনো এসিড যা উদ্বেগ এবং চাপ লাঘবে সাহায্য করে যাতে আপনি একটু রিলাক্স বোধ করেন। যদি আমরা অন্যান্য চা যেমন রঙ চা, দুধ চা, ইত্যাদি থেকে বেশি পরিমাণে এল-থিয়ানিন বিদ্যমান।

৭। হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়কঃ

এই ভেষজ, প্রাকৃতিক চা হাড়ের রোগ যেমন অস্টিওপোরেসিস এর ঝুকি কমাতে সাহায্য করে। অস্টিওপোরেসিস রোগের কারনে কোমড়, মেরুদন্ড, এবং কব্জির ক্ষয়ের ঝুকি বাড়ে। কিছু প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে গ্রীন টি তে উচ্চ ঘনত্বের এন্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা হাড়কে আরো সুদৃঢ়/গঠন করতে সাহায্য করে।

৮। স্ট্রোকের ঝুকি কমাতে সহায়কঃ

বর্তমানে স্ট্রোক একটি মারাত্মক ব্যাধি। স্ট্রোক প্রতিরোধে এবং এর পরিমাণ হ্রাস করতে অনেক ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে যা অনেকের জন্যেই বহন করা কষ্টসাধ্য। তাই এরকম অপ্রত্যাশিত সমস্যা প্রশমনে এই ভেষজ, প্রাকৃ্তিক চা খুবই ফল্প্রসূ হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৪৮২-৯৬৪ গ্রাম এই ভেষজ চা সেবন করে তাহলে তার স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা ২১-২৪% পর্যন্ত কমে যেতে পারে।[১]

৯। টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর ঝুকি কমায়ঃ

কিছু রিসার্চে দেখা গেছে যে, যারা সবুজ চা সেবন করে তাদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে তাদের থেকে যারা কোন চা-ই পান করে না। পলিফেনল সমৃদ্ধ হওয়ায় এই চা ডায়াবেটিসের ঝুকি কমাতে সহায়ক। [২]

১০। কোষের ক্ষতি হ্রাস করেঃ

কোষের ক্ষতি হোক এটা আমরা কেউই চাই না। আর কোষের এই ক্ষতি থেকে বাচতে আমরা নানা কার্য সম্পাদন করি। কিন্তু আমরা চাইলে আমাদের কোষগুলোকে সজীব রাখতে পারি নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রীন টি সেবন করে। এর মধ্যে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রী-র‍্যাডিকেল ও ক্ষতিকারক উপাদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে কোষকে রাখে সর্বদা সজীব।

১১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করেঃ

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা এর মতে, ৫ জনের মধ্যে ১ জন প্রাপ্তবয়স্ক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যা খুবই আশঙ্কাজনক। এটি হ্রাস করতে এই চা হতে পারে উপযোগী পানীয়। এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, গ্রীন টি পান করলে উচ্চ রক্তচাপ উল্লেখযোগ্য হারে প্রশমিত হয়। এতে থাকা উচ্চ এন্টি-অক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে এবং রক্তনালীগুলোকে প্রশস্থ করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

১২। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানে ভরপুরঃ

গ্রীন টি তে রয়েছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান যা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সহায়ক। এর প্রধান উপাদান হচ্ছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, সেলেনিয়াম, প্রোটিন, সোডিয়াম, ইত্যাদি। ম্যাগনেশিয়াম রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রনে, পটাশিয়াম হাইড্রেটেড রাখতে, এবং সেলেনিয়াম রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

১৩। দাতের এনামেল মজবুত করতে সাহায্য করেঃ

এনামেল ক্ষয় এবং সেনসিটিভিটি একটি প্রধান সমস্যা। সবুজ চায়ে থাকা প্রাকৃতিক ফ্লোরাইড শক্তিশালী দাতের এনামেল গঠন করে দাতকে ক্ষয় হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং সেনসিটিভিটি হ্রাস করে।

১৪। পরিপাকে/হজমে সহায়কঃ

এই চায়ে থাকে পলিফেনলস পরিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে যা খুব সহজে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে, ভালো ফল পেতে হলে খাবার খাওয়ার ২ ঘন্টা পূর্বে খাওয়া উত্তম।

১৫। ব্রণ দূর করতে কার্যকরীঃ

ব্রণ দূর করতে কার্যকরী

বিভিন্ন স্টাডিতে দেখা গেছে যে, গ্রীন টি যে শুধু হার্ট সুস্থ্য রাখে বা রক্তচাপ কমায় তা নয়, এটি পানে অথবা এর অবশিষ্টাংশ ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। ফলে, আপনার স্কিনকে করে তুলবে আরো প্রাণবন্ত এবং তরুণ। 

উপসংহারঃ

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, গ্রীন টি খাওয়ার উপকারীতা কত। এর রয়েছে নানাবিধ উপকারীতা যার কিছু উপরে আলোচনা করা হয়েছে। তাই, একজন স্বাস্থ্য সচেতন নাগরিক হিসেবে ডেইলি ডায়েটের তালিকায় গ্রীন টি রাখলে মন্দ হয় না।

গ্রীন টি এর রয়েছে অনেক প্রাকৃ্তিক গুণ যা মানবশরীরের জন্যে খুবই উপকারী। এতে করে ২ সুবিধাই পাওয়া যাবে। চা খাওয়াও হলো আবার নানাবিধ উপকারও হলো। আসুন আজ থেকে আমরা গ্রীন টি খাওয়ার অভ্যাস করি, সুস্থ্য জীবন গড়ি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *